ই-পেপার/প্রিন্ট ভিউ
সিনিয়ার রিপোর্টার হাবিব সরকার স্বাধীন :
রাজধানী পল্লবীর সাব-রেজিস্ট্রার প্রদীপ কুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে বাউনিয়া মৌজার ১০ শতাংশ বাণিজ্যিক শ্রেণির জমি বোরো দেখিয়ে (শ্রেণি পরিবর্তন) রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার বিনিময়ে ৩০ লক্ষ টাকা ঘুস গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। তার এ কাণ্ডে সরকার প্রায় কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে হয়েছে বঞ্চিত। ঘুস কেলেঙ্কারির ঘটনা ফাঁস হওয়ায় তেজগাঁওয়ের রেজিস্ট্রি কমপ্লেক্সজুড়ে চলছে তোলপাড়।
জানা গেছে, ২০২৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর পল্লবী রেজিস্ট্রি অফিসে বাউনিয়া মৌজার ১০ শতাংশ জায়গার সাফ কোবলা রেজিস্ট্রি দলিল হয়। ৩০ ডিসেম্বর কমিশনে দলিল (নম্বর ১০৫৯৮) সম্পন্ন করেন সাব-রেজিস্ট্রার প্রদীপ কুমার বিশ্বাস। কমিশনে দলিল সম্পন্ন করার কাজে গিয়েছিলেন উমেদার মোসলেম উদ্দিন। দলিলের দাতা হিসাবে নুর হোম বিল্ডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূরুল ইসলাম গংয়ের নাম রয়েছে। আর তিন গ্রহীতা হলেন-মো. মনির হোসেন, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ও মো. আশরাফুল ইসলাম।অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পল্লবী সাব- রেজিস্ট্রি অফিসে কর্মরত সাব-,রেজিস্ট্রার প্রদীপ কুমার বিশ্বাস দৈনিক গণজাগরণ কে জানায়, ‘কাগজে বাণিজ্যিক লেখা থাকলে তা যদি না করা হয়, তাহলে বকেয়া আদায়ের ব্যবস্থা করা হবে। যদি এমন দেখা যায়, নাল ব্র্যাকেটে বাণিজ্যিক লেখা আছে, তাহলে আমাদের ব্র্যাকেট দেখার সুযোগ নেই।’ ৩০ লক্ষ টাকা ঘুস নিয়ে বাণিজ্যিক জায়গা বোরো দেখিয়ে রেজিস্ট্রি করার অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমাদের বিষয়ে কতজন কতকিছু বলে, আবার আমাদের বিক্রি করে কতজন খাচ্ছে, কত কিছু করছে। আমার এ ধরনের কোনো সুযোগ নেই।’
দলিলের তথ্যমতে, ২০১২ সালের ২৩ জুন এ জমি মোঃ রহমত আলী, করফুন নেছা, আমিরুন নেছাসহ ৩০ জন দাতার কাছ থেকে সাফ কবলা দলিলমূলে মালিক হন নূর হোসেন বিল্ডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ নূরুল ইসলাম। ১০ দশমিক ৬৪ শতাংশ জমির দলিলে মূল্য ধরা হয় ৯৭ লক্ষ টাকা। জমির শ্রেণি বোরো। কিন্তু সবশেষ গত বছরের ১৭ নভেম্বর অনলাইনে এই জমির ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের রসিদে দেখা গেছে, নূর হোসেন বিল্ডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূরুল ইসলাম গংয়ের নামে থাকা ৪৪০০৩ নম্বর দাগের এ জমির শ্রেণি পুকুর (বাণিজ্যিক)। রেজিস্টার অনুযায়ী এই জমির খতিয়ান নম্বর ৩৪৪৫৫। হোল্ডিং নম্বর ১৯৩/৮৪।
দলিলে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ১৩ বছর পরও এই জমির দাম বাড়েনি, বরং কমেছে। ২০১২ সালে এ জমির দলিলমূল্য ছিল ৯৭ লাখ টাকা। আর ২০২৪ সালে এসে এর দলিলমূল্য ধরা হয়েছে মাত্র ২৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ফলে এ খাত থেকে সরকার প্রায় কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে।
জানা যায়, আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর হিসাবে পরিচিত সাব-,রেজিস্ট্রার প্রদীপ কুমার বিশ্বাস এই জমির বাণিজ্যিক শ্রেণির পরিবর্তে বোরো হিসাবে রেজিস্ট্রি করার জন্য দেনদরবার শুরু করেন গত ডিসেম্বরের শুরুর দিকে। ডিসেম্বরের শেষে দলিল লেখক সমিতির সাবেক নেতা ও পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আরেক দোসর জুবায়ের আহমেদের মধ্যস্থতায় ৩০ লাখ টাকা ঘুসের চুক্তিতে দলিল রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হয়। এই ঘুসের দরবারে পল্লবী সাব-,রেজিস্ট্রার অফিসের উমেদার জসিম ও রাজীবও জড়িত।
জানতে চাইলে ঘুস লেনদেনের কথা অস্বীকার করে জুবায়ের আহমেদ বলেন, ‘জমির শ্রেণি পুকুর (বাণিজ্যিক) লেখা আছে। বোরো হিসাবে রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। এখন এনবিআর ধরলে গ্রহীতারা রাজস্বের বাকি অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দেবে। এটা আমাদের কোনো বিষয় না। আমরা এই দলিল করার জন্য বাড়তি কোনো টাকা নেয়নি।সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাউনিয়া মৌজার বাণিজ্যিক শ্রেণির প্রতি শতাংশ জায়গার সরকার নির্ধারিত মূল্য ৪৯ লাখ ৩৭ হাজার ৩৭১ টাকা। এ হিসাবে ১০ দশমিক ৬৪ শতাংশ জায়গার দাম আসে ৫ কোটি ২৫ লাখ ৩৩ হাজার ৬২৭ টাকা। এই দামে দলিল রেজিস্ট্রি করা হলে ১% রেজিস্ট্রি ফি, ১.৫% স্ট্যাম্প, ২% স্থানীয় কর, মুনাফার ওপর কর ৮%, এআইটি ৫% ও ২% ভ্যাট মিলিয়ে সরকারি রাজস্বের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ কোটি ৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। কিন্তু বাণিজ্যিক শ্রেণি পরিবর্তন করে বোরো দেখিয়ে মাত্র ২৪ লাখ ৪০ হাজার টাকার দলিল রেজিস্ট্রি করায় সরকার রাজস্ব পেয়েছে ১০ লাখ টাকার কিছু বেশি। এ হিসাবে সরকার অন্তত ৯২ লক্ষ টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে। বিনিময়ে প্রদীপ বিশ্বাস ৩০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সরেজমিন দেখা যায়, বাউনিয়া-ভাষানটেক প্রধান সড়কসংলগ্ন টিনশেড পাকা বাণিজ্যিক স্থাপনার ওপর সাইনবোর্ডে লেখা এই সম্পত্তির ক্রয়সূত্রে মালিক-জিএমআর ডেভেলপমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মনির হোসেন, ইনটেনসিটি প্রাইভেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম ও নূর পলিমার ইন্ডাস্ট্রির স্বত্বাধিকারী মো. আশরাফুল ইসলাম। জেলা-ঢাকা, থানা-পল্লবী, মৌজা-বাউনিয়া। সাইনবোর্ডে জমির তফশিলের বিবরণও দেওয়া আছে। এলাকাবাসীরা জানায়, একসময় এ এলাকা ডোবা ছিল। তেমন বসতিও ছিল না। এখন এগুলো সব বাণিজ্যিক প্লট। প্রতি কাঠার দাম কোটি টাকা
পল্লবীর বর্তমান সাব-রেজিস্ট্রার প্রদীপ কুমার বিশ্বাসের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলায় হওয়া সত্ত্বেও তিনি রয়েছেন বহাল তবিয়তে। এ ঘটনায় প্রদীপ কুমার বিশ্বাস ও তার সহযোগিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সচেতন এলাকাবাসী। অপরদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে(এনবিআর) টিম অভিযান পরিচালনা করলে সরকারের ক্ষতি হওয়া রাজস্ব আদায় করা সম্ভব বলে মনে করেন।দেশ প্রেমিক সচেতন নাগরিক জনগণ।
সূত্র :গণ জাগরণ