যুক্তরাষ্ট্র চীন ভারত তিন দেশের সঙ্গেই সুসম্পর্ক চায় ইউনূস সরকার
- Repoter 11
- 29 Sep, 2024
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, দেশ এখন নিজস্ব গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে এবং আমরা আমাদের বৈদেশিক নীতির কতিপয় ক্ষেত্রে দেশের স্বার্থ সমুন্নত রাখতে কারও কোনো পরামর্শে বিচ্যুত হব না। আমরা আমাদের নিজস্বতা ও মর্যাদা বজায় রেখে প্রতিবেশীসহ সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে এগিয়ে যাব। ছাত্র-জনতার আকাক্সক্ষা পূরণ এবং দেশের স্বার্থ রক্ষায় আমরা বদ্ধপরিকর।
কূটনৈতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রয়োজনের নিরিখে আমাদের বহুমুখী কূটনীতিই ফলো করা উচিত। জাতিসংঘ অধিবেশনে বা এর বাইরে ড. ইউনূস যাদের সঙ্গে দেখা করেছেন, আলাপ-আলোচনা করেছেন সেটাই হলো বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির বাস্তবতা। সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই আমাদের প্রয়োজন অনুসারে তিনি এই কূটনীতি পরিচলানা করেছেন। এটাই সময়োপযোগী উত্তম কূটনীতি। বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ এবং গণতান্ত্রিক ভিত্তি রচনা করে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রকাঠামো তৈরিতে এই পররাষ্ট্রনীতি আমাদের সহায়তা করবে। তিনি বলেন, আমাদের এখন রাষ্ট্র সংস্কার করে গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রক্রিয়ায় কারিগরি ও অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা প্রয়োজন। এগুলো আমরা কোথায় পাব? এগুলো পাশ্চাত্যের দেশগুলো থেকে আমরা নেওয়ার চেষ্টা করছি। তারা সবাই এসব বিষয়ে সহায়তা করার জন্য অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।হুমায়ুন কবির বলেন, দক্ষিণ-এশিয়া অঞ্চলে অনেকেরই আমাদের অবস্থান সম্পর্কে বিভ্রান্তি রয়েছে। তাদের সঙ্গে বৈঠক করে সেটা বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এর মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, মালদ্বীপসহ সবার সঙ্গেই আলোচনা হয়েছে। আমি মনে করি, আমাদের বাস্তবতার আলোকে একটি নতুন ধারার আঞ্চলিক কূটনীতি হিসেবে এটাকে ব্যাখ্যা করা যায়। আঞ্চলিকতাকে শক্তিশালী করার জন্য সার্ক পুনর্গঠনের কথাও বলছেন ড. ইউনূস। কাজেই আঞ্চলিক রাজনীতিতে আমরা হয়তো একটি নতুন মাত্রা দেখতে পাব। এ ছাড়া আমাদের অর্থনীতির দুরবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গেও তিনি আলোচনা করেছেন। মানবাধিকার নিয়েও বিশ্ব সংস্থার সঙ্গে কথা বলেছেন। আমাদের বর্তমান বাস্তবতায় যাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা প্রয়োজন ড. ইউনূস তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সরকারের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা ছিল। বিশ্ব রাজনীতির বিভিন্ন পন্থার কারণে বেশির ভাগ সরকারই একপক্ষীয় কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষা করে গেছে। সর্বশেষ আওয়ামী লীগ সরকারের গোঁয়ার্তুমি ও স্বৈরতান্ত্রিক আচরণের কারণে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বড় ধরনের বৈরিতা দেখা দিয়েছিল। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ইস্যুতে বাংলাদেশকে পড়তে হয়েছে বড় ধরনের চাপের মধ্যে। বিশেষত বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক শুধুই ছিল আনুষ্ঠানিকতার। বাংলাদেশে দায়িত্ব পালন করা মার্কিন রাষ্ট্রদূত বছরের পর বছর সাক্ষাৎ পেতেন না সরকারপ্রধানের, তেমনি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎ পেতেন না বাংলাদেশের সরকারপ্রধান।
জিএসপি বন্ধ করা, বিভিন্ন ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল যে পারস্পরিক সহযোগিতার পরিবর্তে তৈরি হয়েছিল হুমকি-ধমকির সম্পর্ক। নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার পর এ পরিস্থিতি পাল্টে গেছে মুহূর্তেই।
শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয়, একই সঙ্গে চীনের সঙ্গে সুসম্পর্কের কথা বলেছেন ড. ইউনূস। চীনও তাঁকে পুরনো বন্ধু আখ্যা দিয়ে সব সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। ইউরোপের দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সঙ্গে ড. ইউনূসের ব্যক্তি সম্পর্কেই বাংলাদেশের কূটনীতির রূপ পাল্টে গেছে। কয়েক বছর ধরে একেবারেই বন্ধ থাকা পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক আবার স্বাভাবিক হয়ে আসছে। এত দিন ভারতের সঙ্গে থাকা একমুখী সম্পর্কেও নতুন মাত্রা দিতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। স্বার্থ রক্ষা করে প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ককে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। ভারতের সঙ্গে বৈরিতার কোনো সুযোগও রাখা হবে না।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষস্থানীয় এক কর্মকর্তা জানান, কূটনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সুযোগ বৃদ্ধির বিষয়ে প্রমাণ পাওয়া যায় দুটি ঘটনায়।
প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, এক দিন মিটিংয়ের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা উঠে গিয়েছিলেন। পরে এসে বললেন, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম তাঁকে ফোন করেছিলেন। তখন মালয়েশিয়ার বন্ধ শ্রমবাজার আবার চালুর বিষয় উত্থাপন করেন উপদেষ্টা। তখন ড. ইউনূস বলেন, আনোয়ার ইব্রাহিম আমার বন্ধু, যা চাইব পাওয়া যাবে। অন্যদিকে আরব আমিরাতে বিক্ষোভ করা বাংলাদেশিদের ড. ইউনূসের এক ফোনেই ক্ষমা করা হয়েছে। অথচ আমিরাতের আমিরের সঙ্গে সেভাবে ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতাও নেই ড. ইউনূসের। তারপরও তাঁকে সম্মান করে কঠোর আইনের উপেক্ষা করে বিরলভাবে বাংলাদেশিদের ক্ষমার ঘোষণা দেয় আমিরাত। সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, সব মিলিয়ে খুবই ইফেক্টিভ অ্যান্ড ইন্টেনসিভ ডিপ্লোমেটিক ইন্টার্যাকশন চলছে। বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক হবে। বিশেষত এবারের জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে ড. ইউনূসের যোগদান করাটা ছিল এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।
Leave a Reply
Your email address will not be published. Required fields are marked *